ছবি:নিজস্ব
উত্তর সিলেটের সীমান্ত জনপদের তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন সিলেট-৪। যে আসনের তিনটি উপজেলায় প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর। রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যপূর্ণ প্রাচীনকালের স্বাধীন ও সমৃদ্ধশালী একটি রাজ্য প্রতাত্ত্বিক নৃতাত্ত্বিক ভূতাত্ত্বিক এর নির্দেশন জৈন্তাপুর উপজেলা, দেশের অন্যতম পরিচিত সাদা পাথরের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও সুশীতল স্বচ্ছ জলের বিছনাকান্দি,প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও এশিয়া মহাদেশের অন্যতম সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল নিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা।
তিনটি উপজেলায়ই প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য খাল বিল নদী কৃষি জলাশয় সহ উৎপাদনশীল সম্পদে ভরপুর তিন উপজেলা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়ে এত কিছু থাকার পরেও এই তিন উপজেলার বসবাসকারী সিংহভাগ বাসিন্দা বেকারত্বের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে এই জনপদের মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। নেই স্হায়ী কোন কর্মসংস্থান ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেই। এছাড়া আধুনিকায়নের এই যুগে তিন উপজেলার মানুষ জন শিক্ষা দীক্ষা পিছিয়ে। অনুন্নত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। স্বাধীনতা পরবর্তী সিলেট ৪ আসনে নামমাত্র উন্নয়ন হলেও জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি এবং সেই রকম উন্নয়ন হয়নি। এত কিছুর জন্য এই আসনের সচেতন মহল সংসদে স্হানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকার বিষয়টিকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন। উদাহরণস্বরূপ তারা বলেন,সাবেক স্হানীয় সংসদ সদস্য মরহুম দিলদার হোসেন সেলিমের আমলে পাঁচ বছরে যা হয়েছে বিগত ১৭ বছরে তা হয়নি।তাই সিলেট-৪ আসনের ভোটাররা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিতে বিশ্বাসী। নির্বাচনের সময় যত গড়াচ্ছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবী ততই জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে গত বুধবার ৫ নভেম্বর রাত থেকে সিলেট-৪ আসনে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে এই আসনের ভোটার ও সচেতন মহলের কাছে স্হানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি বাস্তবায়নে অধিকারে পরিণত হয়েছে। এই আসনের ভোটারদের কাছে আগামী নির্বাচনে কোন হেভিওয়েট প্রার্থী নয় ধানের শীষের লোকাল প্রার্থীই তাদের একমাত্র ভরসা।তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সভা মিছিল মিটিং স্লোগানে বিভিন্নভাবে ধানের শীষে স্হানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবী তুলে ধরছেন। স্থানীয় পর্যায়ে এই দাবিকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকরদের বিভিন্ন গ্রাম পাড়া মহল্লা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল লোকাল চাই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে তিন উপজেলার জনপদ। সিলেট-৪ আসনভুক্ত গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ তিন উপজেলার অন্তত ১৩টি স্থানে পৃথক পৃথক মিছিল বের করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মিছিলগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা ‘মানি না মানবো না, লোকাল ছাড়া মানি না’, ‘মানি না মানবো না, হাকিম ছাড়া মানি না’- এমন স্লোগানে এলাকাজুড়ে মুখরতা সৃষ্টি করেন। এই আসনের আরো একজন স্থানীয় ধানের শীষের প্রার্থী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের সমর্থকরাও রাত দুইটার পর থেকে লোকাল চাই হেলাল ভাই স্লোগানে দাবি তোলেন। এক কথায় আগামী নির্বাচনে সিলেট ৪ আসনে ধানের শীষের লোকাল প্রার্থীকে দেখা ভোটারদের মাঝে শুধু দাবি নয়, অধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর হয়ে উঠছেন। তিন উপজেলা বিস্তৃত এই আসনটিতে পাঁচ লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে সব মিলিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী রয়েছেন ডজন খানেক। স্হানীয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন,জেলা বিএনপি'র সাবেক সহ সভাপতি বর্তমান উপদেষ্টা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী,সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিনী এডভোকেট জেবুন নাহার ও জেলা বিএনপি'র উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদ। তবে আবদুল হাকিম চৌধুরী স্থানীয়ভাবে বশি গ্রহণযোগ্য, পরীক্ষিত নেতা হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি সিলেট-৪ আসনে বিএনপির সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বলে ভোটাররা মনে করেন।তাঁরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানান, জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে স্থানীয় প্রার্থী আবদুল হাকিম চৌধুরীকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হোক।ভোটারদের সাথে আলোচনায় জানা যায়,জন্মলগ্ন থেকে আব্দুল হাকিম চৌধুরী বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ও সক্রিয়। আওয়ামী লীগের আমলে তার জনপ্রিয়তার কারণে দুইবার গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় আড়াই লক্ষাধিক ভোটারের এই উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে তার নির্দিষ্ট একটি বলয় ও জনবল শক্তি রয়েছে। রাজনীতির বয়সের শেষ পর্যায়ে এসে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে দল যদি থাকে মূল্যায়ন না করে তাতে তার জন্য জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ব্যর্থতা। তৃণমূলের স্হানীয় রাজনীতিতে যদি নেতা তৈরি না হয়,তাহলে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কার্যক্রম ও দলকে সুসংগঠিত রাখতে নেতৃত্বের ঘাটতি দেখা দেবে।
এডভোকেট জেবুন নাহার এর প্রতি ভোটারদের মতামত হচ্ছে,সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম দিলদার হোসেনের সেলিমের সহধর্মিনী হিসাবে ওনার দাবি গ্রহণযোগ্য। তবে বিশাল এই জনপদে তার জন্য জনসেবা করাটা কষ্টসাধ্য হবে।তাই দল চাইলে তাকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে দিতে পারে। তবে ইদানিং তাঁকে পচার প্রচারণায় মাঠে দেখা যাচ্ছে না।আরো এক স্থানীয় প্রার্থী হেলাল উদ্দিন আহমদ সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের মতামত হচ্ছে,তিনি রাজনীতিতে নতুন এসেছেন। তারপরও যে অবস্থান করেছেন, তিনি যদি রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে পারেন তাহলে তার জন্য আগামীতে সুযোগ রয়েছে।স্থানীয় ভোটারদের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়,বিগত ১৭ বছরে ভোটাররা নিজেরা নিজেদের ভোট দিতে না পারায় ভোট দেওয়ার প্রতি মানুষের মাঝে অনিহা দেখা দিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে স্থানীয় প্রার্থীর বিকল্প কিছু হতে পারে না বলে আপামর জনসাধারণের স্থানীয় প্রার্থীতেই মতামত রয়েছে।
জৈন্তাবার্তা / সুলতানা




